হাত খলুই বা খলুই বা খারোই বা আরো ম্যলা নামে ডাকা এই পাত্রটা মাছে-ভাতে-বাঙালির বিশেষ পরিচিত।
সুন্দর পেচানো,সর্পিল গোলাকার মুখ দিয়ে এই পাত্রের বুননের শেষ হয়। এরপর মুখটা ভালো করে সুতা দিয়ে শক্ত করে বেধে দেয়া হয়। মেছো বাঙালির মাছ ধরার অনুষঙ্গ মজবুত না হলে কি আর চলে!?! মুখ বাধা পর্বের পর আসে, হাতে/কোমরে বাধানোর ব্যাবস্থা করার পালা।
মুলত আদি থেকে এই পাত্রের মুল ব্যাবহার প্রধানত দুই রকম;
১. ঝটপট মাছ ধরে, পাত্রে চালান করে দেয়া। মাছ তাজা থাকে, অনেক্ক্ষণ ছটফট করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাছ ধরে বাড়ি যাওয়া অবধি বেচে থাকে। ফাকা বুননের ঝুড়ির কারসাজি আর কি। আর মুখটা ছোট হয়ে আসার কারণে মাছ জ্যান্ত হলেও লাফ দিয়ে মুক্তির আনন্দ নিতে পারেনা।
এখন মাছ তো আর একটা ধরলে চলবে না। সাধারণত ছোট জাতের মাছগুলোই এতে রাখা হয়।এর ভেতরের মাছগুলো হলো একেবারেই নিজেদের জন্য, একটা দুটো টাকি মাছ, শিং মাছ, শোল মাছে ছা, রয়না মাছ এইসব আরাম করে পাতলা ঝোল করে করে খাওয়া মাছ। তো তার মানেতো, এই পাত্রে, যখন যেটা পাবো ‘ভরে থোবো’ এই সুবিধা দরকার। একারণের এর হাতলটা এমনভাবে করা, যেনো সহজেই কোমরে বেধে ফেলা যায়। কোমরের গামছার সাথে খলুইটা বেধে টপাটপ মাছ পুরতে প্রস্তুত!!!
২. এই খলুইটাই কোমর থেকে খুলে দেয়া হবে গৃহকর্তৃর কাছে এরপর তিনে মাছগুলোকে এক দলা ছাইয়ের ভেতরে ছেড়ে দিয়ে সুনিপন ভাবে কেটে-কুটে আমার এই খলুইতে চালান করে দেবেন। এরপ্র সব মাছ কাটা শেষ করে গটগট করে চলে যাবেন পুকুর পাড়ে। পানিতে নিয়ে ভালোমতন ঝাকি দিলেই মাছ পরিষ্কার!!!
ব্যাস!!! এরপর লবণ-হলুদ মাখিয়ে রান্না শুরু!
এখন আমাদের শহুরে বাস্তবতা হলো, উপরের এই পুরো দৃশ্যপটটাই আমাদের কাছে এখন শ্রেফ গল্পো। জীবনের অংশ হিসেবে নেই।
তবে, পেটে এবং জ্বিভে এখনো মেছো বাঙালির মাছের প্রতি টানটা রয়ে গেছে। তা-ই শহুরে এটুকু বাঙালিপনাতে আরও বেশি বাঙালিপনা ঢেলে দেয়ার আশায়, ট্যাপের নিচ পানিতে মাছ ধুতে সুবিধার কথা মাথায় রেখে, হাতলটার একটু জায়গা পরিবর্তন করা হলো। ব্যাস এটুকুই…
কারিগরঃ মনিমোহন দাস।
উৎসঃ ফরিদপুর।